ওভারট্রাম্প - শাইয়িন কবির


ইদানীং মুগ্ধকে কি যে হ্যাপা পোহানো লাগছে....
এক কোট টাই পড়া বস টাইপের ভদ্রলোক আত্মীয় কিছুদিন হয় তার শ্বশুরকে নিয়ে বাসায় এসে উঠেছেন। সম্পর্কে কাকা হয় তার। একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির বিশাল বড় একটা চেয়ারে তিনি বসেন। দিনের মধ্যে অন্তত সাঁইত্রিশ বার তার রুমে কয়টা এসি চলে, তার সাধের হোয়াইট করোলা রানিং এ কত গতি ওঠায় তার গল্প না করলে তার পেটের ভাত হজম না হয়ে পেট ঠেলে বেড়িয়ে আসা থলথলে ভুঁড়িতে আরো দেড় ইঞ্চি ব্যাস বাড়িয়ে দেয় বলেই মনে হয়।
সে তার ব্যাপার। এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই মুগ্ধর। তিনি কথা বললে চুপ করে মাথা নাড়ে মুগ্ধ, মাথা চুলকায় এবং বিজ্ঞের মত হু হা করে। কিন্তু বস টাইপের লোকজনের একটা সমস্যা আছে। সব শিক্ষক যেমন অন্যদের ছাত্র মনে করেন, সব বসই বোধ করি তেমন অন্যদের কর্মচারী আর নিজেকে সর্বজ্ঞ মনে করে থাকেন। ভেজালটা ওখানেই....
একটু পর পর ডাকবেন, এই মুগ্ধ!
কোন কাজের কথা নাই, হুদাই প্যাচাল পেড়ে বলবেন, যাও।
টুকটাক ফাই ফরমাশের কমতি নেই, আর কোন কাজ করতে দিলে তার অন্তত সত্তরটা খুঁত অবশ্যই বের করবেন, মুগ্ধ কিছু বলতে গেলেই বলবেন, হ্যা? তুমি বেশি বোঝো? যা বলি চুপচাপ শুনে যাও।

বিকেলে হঠাৎ ডাক পড়লো মুগ্ধর, বহুক্ষণ জ্ঞান দেয়ার পর কি একটা প্রসঙ্গে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি যেন কিসে পড়ছো বাবা?
মুগ্ধ যথারীতি কাচুমাচু হয়ে জবাব দিল।
শুনে আকাশ থেকে পড়ার মত চমকে উঠলেন বস কাকু।
" বলো কি! তুমি ডাক্তারী ইঞ্জিনিয়ারিং বাদ দিয়া কি নিয়ে পড়ে আছো।"
মুগ্ধ এবার একটু জোর দিয়েই বললো, ওই ব্যাপারগুলোতে ইন্টারেষ্ট নাই তো কাকা, এজন্যই....
এবার ধমকে উঠলেন ভদ্রলোক, ইন্টারেস্ট! বেশি বোঝো তুমি? জানো, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার মানেই প্রোডাক্টিভ পণ্য। আসলে মিসগাইডেন্স এর অভাব তো। তোমার বাবাও তো বোকা, একবার আমার সাথে কথা বলতে পারতো, আমি একজন শিক্ষিত মানুষ। এ সব গুরুত্ববহ সিদ্ধান্তে শিক্ষিত মানুষের মতামত নেয়া উচিত ছিল।

বকবক করতে লাগলেন, যেন দুনিয়ার একমাত্র শিক্ষিত ব্যক্তি তিনিই। কবে তিনি এয়ারফোর্স একাডেমি তে এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা নিয়েছিলেন, কত সালে কুষ্টিয়ায় ইসলামী স্টাডিজ এর উপর গ্রাজুয়েট হলেন, তারপর তিনি প্যারামেডিক করলেন, কিভাবে হোমিওপ্যাথিক কোর্স কমপ্লিট করলেন, কতগুলো সার্টিফিকেট আছে তার আলমারি তে, অবসরে যাওয়ার পর কি করবেন ইত্যাদি ইত্যাদি.... মানুষ পারেও বটে।

ঠিক ঘড়ি ধরে তেতাল্লিশ মিনিট পর খানিকটা হাঁপিয়ে উঠেই বোধ করি ভদ্রলোক থামলেন, ও হ্যা! তোমাকে যে জন্য ডেকেছিলাম আর কি.... তার আগে এক গ্লাস পানি দাও তো....
পানিটা ঢকঢক করে গিলে নিলেন বসকাকু।
মুগ্ধ এবার একটু ফোঁড়ন না কেটে পারলো না, গলা শুকিয়ে গিয়েছিল কাকা? আরেক গ্লাস দেই?
আবার ধমকে উঠলেন কাকা, বললেন, যাও তো তোমার নানা কে নিয়ে, একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসো। বলি, সকাল বিকাল বেরুনোর সময় উনাকে নিয়েও তো বেড়ুতে পারো, বুড়ো মানুষ!

অগত্যা....
বুড়োকে নিয়ে বের হতে হল।
বেড়িয়েই বুড়ো খানিকটা উশখুশ করতে শুরু করে। যেন কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। এটা বুড়ো বয়সের অসহায়ত্ব নাকি তার বস জামাইয়ের প্রতিনিয়ত ঝাড়ি খাওয়ার কোন বিরুপ প্রতিক্রিয়া তা নিয়ে চিন্তায় ডুব দেবে এমন সময় বুড়োর মুখে কথা ফুটলো, নানাভাই! চা খাবা?
- আমি তো চা খাই না, আপনি যদি খেতে চান, চলেন।

চা স্টলের সামনে গিয়ে বুড়ো আবার মোঁচড়ামুঁচড়ি শুরু করলেন,আমতা আমতা করে বললেন, না! থাক নানাভাই। চা খাবো না, যদি কিছু মনে না করো, একটা কথা বলি?
- হ্যা সমস্যা নাই বলেন।
- একটা সিগারেট নিয়া দেও না? খবরদার তোমার কাকা যেন না জানে, তাহলে কিন্তু....
এবার একটু হেসে উঠলো মুগ্ধ।
একটা বেনসন নিয়ে বুড়োর হাতে দিলো।
বুড়ো ইতস্তত করে বললো, আরে ধরাও ধরাও, টেনে দাও।
দোকানদার এতক্ষন অবাক হয়ে কান্ড দেখছিল, এবার হেসে বললো, নানা নাতি!
বুড়োও হাসছে।
ক্ষয়িষ্ণু দাঁতের ফোঁকড় দিয়ে বেড়িয়ে আসা হাসি।

লাইটারের আগুনে সিগারেটটা ধরিয়ে একটা চুমুক দেয় মুগ্ধ,
নিকোটিনে মিশে যায় শিরায় শিরায়...
ফুসফুস পুড়িয়ে জাগ্রত হয় নিওরোনগুলো..
হঠাৎ বিদ্যুত খেলে যায় ওর মাথায়,,
ওরে শালা!
বুড়ো আমায় দিয়ে কি চালটাই না চাললো....?

[Golzar Shohagh ভাইয়ের #মুগ্ধ সিরিজ অনুসরনে]

মন্তব্যসমূহ