প্রকান্ড মানুষ - রাজন

 



নুসফার শেষ কথাটি কানের ভাঁজে রেখে মুগ্ধ হাঁটতে শুরু করেছে।

 

সেই পাখি দুটোকে উদ্দেশ্য করে যাদের প্রায়ই ব্রিজের পূর্বের রাস্তাটায় কিচিরমিচির করতে শোনে সে। শেষ পর্যন্ত পাখি দুটোকে পেয়েও যায়। তখন পাখিগুলো গভীর আত্মালোচনায় ব্যস্ত। মুগ্ধ একবার ভেবে নিলো কী দিয়ে শুরু করবে। ভাবতে ভাবতেই সিগারেটের কথা মাথায় আসে মুগ্ধের। হালকা গলা খাঁকাড়ি দিয়ে পাখিগুলানকে জিজ্ঞেস করে- লাইটার হবে?

 

পাখিগুলান স্তম্ভিত হয়ে উড়ার জন্য যেই পাখা মেলবে ঠিক তখনি একটা আরেকটাকে বললো -আরে থাম! ওর কথাই তোকে বলেছিলাম।

 

মুগ্ধ কিছু বুঝে উঠতে পারে না। সে আবার বললো- লাইটার প্লিজ!

 

পাখিগুলান এক সাথেই বলে উঠলো-

একটা গল্প বলার জন্যে আপনাকে বহুদিন খুঁজে বেড়াচ্ছি। আপনি কি আমাদের গল্পটা শুনবেন?

 

খানিকটা বিষ্মিত হয় মুগ্ধ, আমি?...... ঠিকাছে…… বলো।

 

একটি পাখি আনন্দে ডানা ঝাপটিয়ে বলতে শুরু করলো-

"আমরা একটি মানুষ কিনেছিলাম। মানুষটিকে কিনেছিলাম একটি বটগাছের মগডাল থেকে। সেই মানুষটির খাবার ছিলো প্রকান্ড সব মানুষ। সে স্নান করতো আলো দিয়ে। ঘুমোতে যেতো জলজ বিছানায়। প্রথমে মানুষটিকে তার সমস্ত চাহিদানুযায়ী পোষ মানানো যেত। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন দেখি সে নেই।

 

অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে বট গাছের কাছে গিয়ে দেখি গাছটি নেই। এমন কি শিকড়টা পর্যন্ত নেই।

 

তারপর অবিরাম খোঁজ করার পর জানতে পারলাম শহরের একটিও প্রকান্ড মানুষ নেই। বেশ চিন্তিত হয়ে দিগ্‌বিদিক ছুটে গিয়ে যখন মানুষটিকে পেলাম তখন দেখি সমুদ্রের মাঝখানে সে শুয়ে আছে। তার নিশ্বাসে সমুদ্র কেঁপে কেঁপে উঠছে। সাত হাজার বছর সমুদ্রতটে অপেক্ষা করার পর তার হঠাৎ একদিন ঘুম ভাঙ্গলো। আমাদেরকে দেখেই সঙ্গে সঙ্গে বললো-

আমাকে পোষ মানাতে চাইলে পৃথিবীর একমাত্র শেষ প্রকান্ড মানুষটিকে নিয়ে আয়।

 

আমরা পৃথিবীর প্রকান্ড সব মানুষ নিয়ে তার কাছে গিয়েছি কিন্তু তার ঘুম ভাঙ্গে নি। তখন মনে হলো যাদের নিয়ে গেছি তারা আসলে কেউ প্রকান্ড মানুষ ছিলো না। পনেরশ কোটি বছর আগে একবার তার ঘুম ভাঙ্গার পর আমাদের জানানো হলো এই শহরেই একজন প্রকান্ড মানুষ হবে আর তিনি হলেন আপনি। আপনাকে আমরা ছ'হাজার বছর পর খুঁজে পেলাম। এবার আপনাকে নিয়ে যেতে পারলেই সেই মানুষটি আমাদের পোষ মানবে। এবার আপনি আমাদের বলুন আপনি কে?

এবং কেনই বা আপনি প্রকান্ড মানুষ? সেই মানুষের খাবারই বা কেন প্রকান্ড মানুষ?"

 

মুগ্ধ মুচকি হেসে পাখিদের বললো- তোমরা অপেক্ষা করো। আমি আসছি…

 

মুগ্ধ আবার হাঁটা শুরু করেছে। পকেট থেকে লাইটার বার করে সিগারেট হাতে কিছু একটা মনে করতে চাইছে।

প্রথম খোঁচাতেই লাইটার থেকে পাথরটা খসে মাটিতে পড়ে যায়। মুগ্ধ পাথর খুঁজতে উপুর হতে যাবে এমন সময় নন্দিতার  হাসির শব্দ কানে আসে। মুগ্ধ ঠিক করে সিগারেট নন্দিতার কাছ থেকেই ধরাবে। তার পাখিগুলানের কথা মনে থাকে না। ব্রিজের মোড়ে এসে নন্দিতার লিপস্টিক মাখানো সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বাতাসের অস্তিত্ব নির্ণয় করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে মুগ্ধ....

মন্তব্যসমূহ