মহাকাব্যিক - শাইয়িন কবির
সেদিনও ছিল দুপুর এমন,
ঝকঝকে রোদে অস্থির মন,
আর ঘড়ির কাটায় তখন প্রশ্রয়!
ঘড়ির কাটার কথা মনে পড়িতেই বুঝিলাম যথেষ্ট লেট হইয়া গিয়াছে।
কলেজের বান্দরগুলার ফেবুলাস আইডিয়া,ধরিয়া ধরিয়া ডাস্টবিনে হান্দাও, হইতে বাঁচিবার জন্য টিফিন টাইমে ক্যান্টিনের দেয়াল টপকাইয়া চয়নের বুদ্ধিতে কলোনীর ভেতর কোন এক সুন্দরী রমনীর বাসার সামনের বেঞ্চিতে বসিয়া ছিলাম,থুরি ,আত্মগোপন করিয়া ছিলাম আমরা।
হে হে হে!
চয়ন আর কদু উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াইয়া পঞ্চম তলার ক্লাসে গিয়া পৌছাইল।
এদিকে আমি আর মহাব্রিলিয়ান্ট শুভ পেছনে পড়িয়া রহিলাম।
দেরী হইয়াছে কেন তাহার একটা উপযুক্ত উত্তর দিবার জন্য লাইব্রেরীতে গিয়া দুইজন দুখানা বই লইয়া উপরে আসিতেই দেখি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জিয়া সাহেব ক্লাসে ঢুকিতেছেন।
ইহাই তাঁহার আমাদের সাথে প্রথম ক্লাস।
দরজায় দেখিলাম আমাদেরই মত কিছু পটেনশিয়াল(খেঁকশিয়াল নহে) ইশটুডেন্ট দাড়াইয়া রহিয়াছে। তাহাদের একে একে জিজ্ঞাসাপূর্বক ক্লাসরুমে প্রবেশাধিকার হইতে বঞ্চিত করিবার এক প্রকার ঘোষনাই দিয়া দিলেন। এবার আমাদিগের পালা,দুই মহাপাতক দুইখানা বই দেখাইয়া বলিলাম যে লাইব্রেরী হইতে ফিরিতে দেরী হইয়াছে।
শুনিয়া তিনি আমাদের ত ক্লাসে ঢুকিতে দিলেনই,উপরন্তু ক্লাসের সামনে একেবারে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করিয়া বসিলেন।
হে হে হে!
আমাদের কৃতকর্মে সন্তুষ্ট হইয়া স্বীয় উদারতায় বাকি বদগুলাকেও ক্লাসরুম নামক খোয়াড়ে পুরিয়া শুরু করিলেন তার অমর ক্লাসখানি।
"আমি তোমাদের কবিতা পড়াবো, তোমরা কি কেউ বলতে পারো কবিতা কি?"
একে ওকে ধরিয়া ক্লান্ত হইয়া শেষে ক্লান্ত হইয়া বলিলেন,"শাইয়িন,তুমি কবিতা বলতে কি বোঝ?"
কিছু না ভেবেই ঝট করিয়া বলিয়া বসিলাম,"স্যার,পাগলের প্রলাপ"
চোখমুখ দেখিয়া বুঝিলাম আমার এহেন অমূল্য বাণী তাহার পছন্দ হয় নাই।
সুতরাং না থামিয়াই বলিয়া যাইতে লাগিলাম,"স্যার আসলে কবিদের মনের ভাষা ব্যবহারিক ভাষাতে রুপান্তরিত হলে যা হয় তাই কবিতা।এটা মনে হতে পারে এক প্রকার পাগলামীই। কেননা সাধারন চোখে যা দেখা যায়,কবিদের চোখ তা হতে ভিন্নতর কিছু দেখতে পারে,এজন্য....."
-"তবে তুমি কি বলতে চাও কবিদের চোখ সাধারন চোখের থেকে আলাদা?"
"জ্বী স্যার,অবশ্যই।"
"কেমন? তা বলতে পারবে?"
কি করিব,এইবার আমি স্বভাবসিদ্ধ উপায়ে আমতা আমতা করিতে লাগিলাম।
জিয়াকাকু তার মেয়েসুলভ গলায় তখন বলিলেন,"আচ্ছা, দেখি ক্লাসে কোন কবি পাওয়া যায় কিনা,তারর মুখ থেকেই নাহয় শুনি?
আচ্ছা, তোমাদের মধ্যে লেখালিখি করো এমন কেও আছ?"
এইবার বেশ অনেকগুলো হস্তের উদয় ঘটিল।
নাহিদ বলিল সে কবি।
আরেকজন বলিল সে কবিতা লিখে।
এমনকি রাহাদ ভাই ও নিজের কবিসত্তার উন্মেষ ঘটাইলেন সেইদিন।
রিমনভাই না কে জানি লাফাইয়া উঠিয়া কহিল সে গীতিকার!
কে যেন সায়েন্স ফিকশন গল্প লেখিয়া সেদিনই রীতিমত ফর্মে চলিয়া আসিল।
সকলের বলা শেষ হইতে দেখা গেল একখানা হাত তখনো বাকি রহিয়াছে।
শুভ'র কথাই বলিতেছি।
স্যার তখনো আগ্রহের সাথে জিজ্ঞাসিলেন,তুমি কি লেখ বাবা?
শুভ কহিল,স্যার লিখি না,লিখতেছি।
স্যার কহিলেন,কি লিখিতেছ?
শুভ বলিল,স্যার মহাকাব্য লিখিতেছি।
এই কথা হাসিব না কাদিব তাহা বুঝিতে পারিলাম না।
জিয়াকাকু স্ফীত হাসিয়া বলিলেন,কবি খুজছিলাম,মহাকবি পেয়ে যাব ভাবতে পারি নাই। তো বেশ, কতদুর.... ?
"স্যার,এই ধরেন, সব মিলিয়ে ছয় লাইন,আরো দুই লাইন মাথায় আছে। লিখে ফেলব...."
সেদিন হাসিতে হাসিতে প্রায় বেহুশ হইয়াই গিয়াছিলাম।
কি বলিব!!!!
হে হে হে।
মুল বিষয় হইতে সরিয়া গিয়া লিখিতে লিখিতে প্রায় একখানা গাজীর পটই লিখিয়া ফেলিলাম।
কি করব বলেন,আমারো তো এই ঘটনা মনে ছিল না,,,,,
কিন্তু শত শতাব্দী পর সেই মহাকবি ফেসবুকে আসিয়া ফেসবুক কাপানো স্টাটাস দিয়া পরবর্তী দুই লাইন ঘোষনা করিবেন,তাহা কে জানিত???
আসলে সেই মহাকবিকে শুভেচ্ছা জানাইতে গিয়াই গাজীর পট লিখিয়া ফেলিলাম।
হে হে হে!
সেলাম হে মহাকবি!!!
(স্মৃতিচারণ,
সময়কাল - ২০১৩)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন