নীলার চার দেয়াল - জয়ন্ত
ঘরটায় কেবল একটিই জানালা। সেই জানালার জং ধরা শরীরে একটি হাত, পাঁচটি আঙ্গুল।বাইরের দু-চারটি ছোট্ট চড়ুই সেই আঙ্গুলগুলোর মালিককে একটি বার দেখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। বারকয়েক উঁকি দেয় অন্ধকার ঘরটার ভেতর। ব্যর্থতার হতাশা তাদের ভেতর কাজ করে কিনা বলা মুশকিল। হয়ত তাদের মস্তিষ্কগুলো ভেবে নেয় আঙ্গুলগুলো মালিকহীন। উড়ে যায় তারা। দুটো চোখ চেয়ে দেখে তাদের। অন্ধকার ঘর থেকে চোখ দুটো অনুসরণ করে চড়ুইগুলোকে। সেই চোখ দুটোতে আজ পর্যন্ত কোন স্বপ্নই বাসা বাঁধেনি । অন্যের স্বপ্নের কথা নিজের নিউরনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রেরণ করাই চোখ দুটো একমাত্র কাজ। আরো অনেক কিছু দেখতে পায় চোখ দুটো। ঐ যে দুরের ঝোপের আড়ালে ছেলেটা মেয়েটাকে চুমু খাচ্ছে। আর না জানি কি কি করছে! মানুষের এই ধরণের ব্যক্তিগত গোপণ কাজ দেখবার আগ্রহটা সব মানুষের ভেতরেই পরিলক্ষিত হয়। অন্ধ মানুষ তার প্রেয়সিকে দেখতে না পেয়ে যতটা না মনঃক্ষুণ্ণ হন, তা অপেক্ষা তার জীবন অধিক কষ্টকর হয়ে ওঠে এরকম অবস্থায় ,নিজের দুর্ভাগ্যটা সে সব থেকে বেশি টের পায় এরকম মুহূর্তেই।
নীলা অবশ্য তেমনটা নয়। তার বাড়ির সামনে ছোট খাটো কয়েকটা ঝোপ রয়েছে। সেখান থেকে মানুষের যাতায়াত করবার খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না।কপোত-কপোতির জন্য আদর্শ দর্শনীয় স্থান । বিবাহপূর্বক যৌনালাপ এবং যৌন বিষয়ক জ্ঞান আহরণের উদ্দেশ্যে এরকম স্থানেই শিক্ষাসফর করে তারা । তারা কিছুটা মৌমাছির মতো , একজন শিক্ষা সফরের স্থান খুঁজে পেলে আরেকজনকে সেখানে একবার হলেও ভ্রমন করবার নিমন্ত্রণ দেয়।
নীলার ঘরে চারটি দেয়াল। দক্ষিণ দেয়ালে সেই ছোট্ট জং ধরা জানালাটা । একটা দরজাও অবশ্য আছে। তাতে কি? দক্ষিনের হাওয়া আসুক। উত্তরের হাওয়া যাতে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য নীলার স্বামী সকালে কাজে বের হবার সময় দরজায় একটি মস্ত তালা লাগিয়ে যায়। সন্ধ্যে হলেই তালা খোলার শব্দ পায় নীলা। অগাধ ভালবাসা তার নীলার প্রতি । অবশ্য থাকবারই কথা।এত সুন্দর সম্পত্তি যে কেবলই তার ,কোনো ভাগ নেই কারো সাথে । পরকীয়া নামক একটি বিষয়-বস্তুর চিন্তাভাবনা তার ভেতরে সর্বদা ঘোরপাক খায় । তার জন্যই এই অব্যর্থ পন্থা।
তালা ঝুলতে থাকে দরজা বেয়ে । কেবল জানালাই খোলা থাকে । অগত্যা নীলার চোখ চলে যায় ঝোপ গুলোর দিকে ।নীলা হাসে ,সে ভাবে সেও বসে আছে কোনো একটা ঝোপের আড়ালে । তার পাশে একটি ছেলে ।ছেলেটা কে তা সে জানে না। জানবার খুব একটা প্রয়োজনও নেই , যেকোনো একটা ছেলে হলেই হবে । শিউরে উঠে নীলা ,হাসতে হাসতেই চোখে জল চলে আসে তার । সে তো ভেবোছিল সে হয়তো বা কাঁদতেই ভুলে গেছে । অনেক দিনই কাঁদে না সে ।কাঁদার প্রয়োজন পড়ে নি তার এতটা দিন ।আজ তার বড্ড কাঁদতে ইচ্ছে করছে ।
ছোটবেলা থেকেই চার দেয়ালে বন্দি তার জীবন । এই দেয়ালেই সে গল্প লেখে , এই দেয়ালকেই সে গান শোনায় - জীবনের গান । যে সময়টায় তার ভাইরা বাড়ির পাশের কাঁদা ভর্তি মাঠে ফুটবল খেলতো,মনের আপণ মাধুর্য মিশিয়ে সারা অঙ্গে কাঁদা মাখত, নীলা তখন জানালা দিয়ে নীল আকাশে তাদের কাঁদা মাখার প্রতিচ্ছবি উপভোগ করতো , তার যে কল্পনাশক্তি বড়ই প্রবল। আবার উচ্চরবে বিদ্যা দ্বারা মস্তক বোঝাই করার সময় হলে নীলা পর্দার আড়াল থেকে বার কয়েক উঁকি মারতো । স্বামীর ঘরের চার দেয়াল তার কাছে নতুন নয়। তার অভ্যাস আছে এরকম চার দেয়ালের সাথে মানিয়ে নেবার ।জীবনে একবারটি সে আকাশ দেখেছে আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে - বিয়ের পর স্বামীর ঘরে প্রবেশের সময়।
মেঘ জমেছে আকাশে, ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিও পড়ছে। কোনদিন বৃষ্টিতে ভেজে নি নীলা ।কেবলই দূর থেকে দেখেছে,হাতে মেখেছে। আজও হাত টা সে বাড়িয়ে দিল জানালা দিয়ে । বৃষ্টির সাদাটে স্বচ্ছ কান্না গড়িয়ে আসছে নীলার হাত বেয়ে । হাত মুঠো করলো নীলা , সারা মুখে মেখে নিল সে । কান্না থেমে গেছে তার । সত্যিকারের একাকিতে্বর কান্না বোধয় সে সত্যিই ভুলে গেছে । কারণ সে তো একা নয় মোটেও।চারটি দেয়াল তার সঙ্গি । সে ভালবাসে তাদেরকে ।মনে মনে সে ঐ দেয়ালকেই স্বামী বলে স্বীকার করে । সে ভাবে স্বামী হবার জন্য লিঙ্গের আবশ্যকতা নেই , সেটা কেবল দরকার বেড পার্টনারের ক্ষেত্রে । স্বামী হবার জন্য বরং প্রয়োজন আছে বিশ্বাসের , সত্যিকারের ভালবাসার , সত্যিকারের সঙ্গদানের । তালা বন্ধের আওয়াজ হতে তালা খোলার আওয়াজ হবার আগ পর্যন্ত তো ঐ দেয়ালগুলোই তার সঙ্গ দেয় , তাকে স্পর্শ করে । নীলা তো মাথা ঠেকিয়ে রাখে ঐ দেয়ালগুলোরই মসৃণ বুকে । দখিণা বাতাসে তার চুলগুলো তো ঐ দেয়ালগুলোতেই বারবার আছাড় খায় ।
বৃষ্টির শেষ ফোঁটাটাও শেষ ।বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রকৃতি । কপোত-কপোতিরা এক এক করে উঠে যাচ্ছে । জানালাটা বন্ধ , আজ প্রথমবারের মতো চড়ুইগুলোর চোখে হতাশার চিহ্ন স্পষ্ট হয়েছে ।
আলো জ্বলেনি এখনো ঘরে । অন্ধকার ঘর তেলাপোকাদের রাজসভা স্বরূপ । হঠাৎই তালা খোলার শব্দ হল ,আলোও জ্বলল ঘরে ।তেলাপোকাগুলো তাদের সহজাত প্রবৃত্তির বাতিক্রম না ঘটতে দিয়ে দ্রুত রাজসভা প্রস্থান করলো । আর ঘরটা থেকে বের হল একটি চিৎকার । বিপদের আঁচ পেয়ে চড়ুুইগুলো আর বসে থাকতে পারল না । আজ তাদের গতিপথের দিকে কারো দৃষ্টি নেই.......................................................................................................................................
নীলার চার দেয়াল ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ।নীল আকাশ থেকে ঝুলছে নীলা । নগ্ন তার শরীর , কেবল গলায় তার আপন শাড়ি জড়িয়ে রেখেছে ,আর তার মুখ থেকে ক্ষরিত হচ্ছে এক ফালি তৃপ্তির হাসি ।
নীলা অবশ্য তেমনটা নয়। তার বাড়ির সামনে ছোট খাটো কয়েকটা ঝোপ রয়েছে। সেখান থেকে মানুষের যাতায়াত করবার খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না।কপোত-কপোতির জন্য আদর্শ দর্শনীয় স্থান । বিবাহপূর্বক যৌনালাপ এবং যৌন বিষয়ক জ্ঞান আহরণের উদ্দেশ্যে এরকম স্থানেই শিক্ষাসফর করে তারা । তারা কিছুটা মৌমাছির মতো , একজন শিক্ষা সফরের স্থান খুঁজে পেলে আরেকজনকে সেখানে একবার হলেও ভ্রমন করবার নিমন্ত্রণ দেয়।
নীলার ঘরে চারটি দেয়াল। দক্ষিণ দেয়ালে সেই ছোট্ট জং ধরা জানালাটা । একটা দরজাও অবশ্য আছে। তাতে কি? দক্ষিনের হাওয়া আসুক। উত্তরের হাওয়া যাতে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য নীলার স্বামী সকালে কাজে বের হবার সময় দরজায় একটি মস্ত তালা লাগিয়ে যায়। সন্ধ্যে হলেই তালা খোলার শব্দ পায় নীলা। অগাধ ভালবাসা তার নীলার প্রতি । অবশ্য থাকবারই কথা।এত সুন্দর সম্পত্তি যে কেবলই তার ,কোনো ভাগ নেই কারো সাথে । পরকীয়া নামক একটি বিষয়-বস্তুর চিন্তাভাবনা তার ভেতরে সর্বদা ঘোরপাক খায় । তার জন্যই এই অব্যর্থ পন্থা।
তালা ঝুলতে থাকে দরজা বেয়ে । কেবল জানালাই খোলা থাকে । অগত্যা নীলার চোখ চলে যায় ঝোপ গুলোর দিকে ।নীলা হাসে ,সে ভাবে সেও বসে আছে কোনো একটা ঝোপের আড়ালে । তার পাশে একটি ছেলে ।ছেলেটা কে তা সে জানে না। জানবার খুব একটা প্রয়োজনও নেই , যেকোনো একটা ছেলে হলেই হবে । শিউরে উঠে নীলা ,হাসতে হাসতেই চোখে জল চলে আসে তার । সে তো ভেবোছিল সে হয়তো বা কাঁদতেই ভুলে গেছে । অনেক দিনই কাঁদে না সে ।কাঁদার প্রয়োজন পড়ে নি তার এতটা দিন ।আজ তার বড্ড কাঁদতে ইচ্ছে করছে ।
ছোটবেলা থেকেই চার দেয়ালে বন্দি তার জীবন । এই দেয়ালেই সে গল্প লেখে , এই দেয়ালকেই সে গান শোনায় - জীবনের গান । যে সময়টায় তার ভাইরা বাড়ির পাশের কাঁদা ভর্তি মাঠে ফুটবল খেলতো,মনের আপণ মাধুর্য মিশিয়ে সারা অঙ্গে কাঁদা মাখত, নীলা তখন জানালা দিয়ে নীল আকাশে তাদের কাঁদা মাখার প্রতিচ্ছবি উপভোগ করতো , তার যে কল্পনাশক্তি বড়ই প্রবল। আবার উচ্চরবে বিদ্যা দ্বারা মস্তক বোঝাই করার সময় হলে নীলা পর্দার আড়াল থেকে বার কয়েক উঁকি মারতো । স্বামীর ঘরের চার দেয়াল তার কাছে নতুন নয়। তার অভ্যাস আছে এরকম চার দেয়ালের সাথে মানিয়ে নেবার ।জীবনে একবারটি সে আকাশ দেখেছে আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে - বিয়ের পর স্বামীর ঘরে প্রবেশের সময়।
মেঘ জমেছে আকাশে, ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিও পড়ছে। কোনদিন বৃষ্টিতে ভেজে নি নীলা ।কেবলই দূর থেকে দেখেছে,হাতে মেখেছে। আজও হাত টা সে বাড়িয়ে দিল জানালা দিয়ে । বৃষ্টির সাদাটে স্বচ্ছ কান্না গড়িয়ে আসছে নীলার হাত বেয়ে । হাত মুঠো করলো নীলা , সারা মুখে মেখে নিল সে । কান্না থেমে গেছে তার । সত্যিকারের একাকিতে্বর কান্না বোধয় সে সত্যিই ভুলে গেছে । কারণ সে তো একা নয় মোটেও।চারটি দেয়াল তার সঙ্গি । সে ভালবাসে তাদেরকে ।মনে মনে সে ঐ দেয়ালকেই স্বামী বলে স্বীকার করে । সে ভাবে স্বামী হবার জন্য লিঙ্গের আবশ্যকতা নেই , সেটা কেবল দরকার বেড পার্টনারের ক্ষেত্রে । স্বামী হবার জন্য বরং প্রয়োজন আছে বিশ্বাসের , সত্যিকারের ভালবাসার , সত্যিকারের সঙ্গদানের । তালা বন্ধের আওয়াজ হতে তালা খোলার আওয়াজ হবার আগ পর্যন্ত তো ঐ দেয়ালগুলোই তার সঙ্গ দেয় , তাকে স্পর্শ করে । নীলা তো মাথা ঠেকিয়ে রাখে ঐ দেয়ালগুলোরই মসৃণ বুকে । দখিণা বাতাসে তার চুলগুলো তো ঐ দেয়ালগুলোতেই বারবার আছাড় খায় ।
নীলা বলে ওঠে, আমি ভালবাসি । দেয়ালগুলো নিথর - নিস্চুপ ভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে । তবুও নীলা যেন প্রত্যুত্তর শুনতে পায়। ঘরের ছাদ থেকে নীলার কানের গহব্বরে কে যেন প্রতিধ্বনি তুলে বলে - ভালবসি । নীলার চোখ এবার আর এত বছরের শক্ত বাঁধনকে আসটে-পৃষ্টে বেঁধে রাখতে পারে না । নীলা আছড়ে পড়ে দেয়ালে । নখ দিয়ে আঁচড়ে ক্ষত বিক্ষত করবার ব্যর্থ প্রয়াস চালায় দেয়ালগুলোর বুকের উপর । চুমু খেতে তাকে সে ঘন ঘন । নীলা হাত বুলায় দেয়ালটার নগ্ন শরীরের উপর । আরো জোরে জোরে হাত বুলাতে থাকে সে ।আরো জোরে আঁকড়ে ধরে সে দেয়ালটাকে । তার শাড়ির আঁচলটা হঠাৎই নিচে পড়ে যায় ।
বৃষ্টির শেষ ফোঁটাটাও শেষ ।বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রকৃতি । কপোত-কপোতিরা এক এক করে উঠে যাচ্ছে । জানালাটা বন্ধ , আজ প্রথমবারের মতো চড়ুইগুলোর চোখে হতাশার চিহ্ন স্পষ্ট হয়েছে ।
আলো জ্বলেনি এখনো ঘরে । অন্ধকার ঘর তেলাপোকাদের রাজসভা স্বরূপ । হঠাৎই তালা খোলার শব্দ হল ,আলোও জ্বলল ঘরে ।তেলাপোকাগুলো তাদের সহজাত প্রবৃত্তির বাতিক্রম না ঘটতে দিয়ে দ্রুত রাজসভা প্রস্থান করলো । আর ঘরটা থেকে বের হল একটি চিৎকার । বিপদের আঁচ পেয়ে চড়ুুইগুলো আর বসে থাকতে পারল না । আজ তাদের গতিপথের দিকে কারো দৃষ্টি নেই.......................................................................................................................................
নীলার চার দেয়াল ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ।নীল আকাশ থেকে ঝুলছে নীলা । নগ্ন তার শরীর , কেবল গলায় তার আপন শাড়ি জড়িয়ে রেখেছে ,আর তার মুখ থেকে ক্ষরিত হচ্ছে এক ফালি তৃপ্তির হাসি ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন