আমি মুগ্ধ হইয়াছি

আমি মুগ্ধ হইয়াছি।
সোহাগ ভাইয়ের ইল্যুশন সৃষ্টিকারী মুগ্ধ নয়, ফেসবুকে লুলামী করা আইডি মুগ্ধও নয়, আবার কবরস্থানে ভুতের দৌড়ানি খাওয়া মুগ্ধও নয়।
আমি কেবল মুগ্ধতার কথাই বলিতেছি। যেইখানে মুগ্ধ মানে কেবলই মুগ্ধ, অন্য কিছু নয়....

আপনারা হয়ত বলিবেন, বাহ! এ আর এমন কি, কত রাধারমন দেখিয়া কত মদন শত শত স্টেটাস প্রসব করিতেছে ফেসবুকে, ক্রাশ কনফেশনের পেইজগুলিতে হাজার হাজার কেচ্ছা কাহিনী প্রতিনিয়ত ঘটে যেইখানে, সেইখানে শাইয়িন কবিরের এহেন গল্পকথা আবেদনহীন!
কথা যে মিথ্যা তাও নয়।
আবার অনেকে জিভ কাটিয়া বলিবেন, শেষমেশ বোধ করি রমনীর প্রেমে পড়িয়াই গেল শাইয়িন....

প্রেম বোধ করি নয়,তবে এইক্ষেত্রে মুগ্ধতা শব্দটাই যথাযথ সংজ্ঞা পায়....

সকালে উঠিয়াই দেখিলাম, যথেষ্ট দেরী হইয়া গিয়াছে।
কোনমতে কাপড় গায়ে গলাইয়াই মোসতাক সাহেবকে ফোন দিলাম ক্যান্টনমেন্ট হইতে হেলিকপ্টার নামক উড়ুক্কু যানটি পাঠাইয়া দিবার জন্য। সে অত্যন্ত নিরসমুখে জানাইলো গতকাল রাতে তিনি নেশাগ্রস্থ অবস্থায় হেলিকপ্টার খানা নিয়া বিছানায় ঘুমাইতে গিয়াছিলেন, সকালে নাকি দেখা যায় ইঞ্জিন বিকল হইয়া রহিয়াছে, চাকা টাল হইয়াছে ইত্যাদি ইত্যাদি.... কি ধকলটাই গিয়াছে বেচারা হেলিকপ্টারের উপর কে জানে....

আর কি!
অগত্যা পলাশেই উঠিতে হইলো।
দ্বিতীয় সারিতে বসিয়া টাই আর জুতো ঠিক করিতে করিতে নজর পড়িলো বাসের সামনের দিকে, হাটু অবধি বোরখা পড়া কেউ একজন বাসের সামনে দাঁড়াইয়া উৎকন্ঠার সহিত তাহার এন্ড্রয়েড ফোনটি দিয়া কাহাকে জানি অজস্রবার কল করিতেছে; চোখ, ভ্রু, কপালের কিছু অংশ আর হাতের পাতা অর্থাৎ তাহার দৃশ্যমান অংশসমুহ তাহার উৎকন্ঠার পরিপূর্ন ভাবখানিই প্রকাশ করিতেছে , মনে মনে হাসিলাম!
আহারে বাচ্চাটা!

পরে দেখিলাম ভাবনা ভুল। সে তাহার বান্ধবীর জন্য অপেক্ষা করিতেছিল, বাস ছাড়িবার আগ মুহুর্তে বান্ধবী আসিয়া উপস্থিত হইলো এবং তাড়াহুড়া করিয়া পলাশে উঠিয়া সামনে সংরক্ষিত মহিলা আসনখানা অধিকার করিয়া লইলো....
তাহার সহিত পরিচয় আমার কেবল চোখ দিয়াই, চোখের বাজারে অমন ভাষাবহুল চোখ পাওয়া এই সময়ে বড় দুষ্কর,
আমি চোখের রুপ বর্ননা করিতেিছ না,পারতপক্ষেও সে আমার দিকে তাকায় নাই, কিন্তু কেউ যে তাহার উপর নজর রাখিতেছে তাহা বুঝিয়াছিল কিনা কে জানে?
সে যখন তাহার বান্ধবীর সাথে কথোপকথন চালাইতেছিল তাহার বাচনভঙ্গি দেখিয়াছি, কি বুদ্ধিদীপ্ত চাহনী, হাত নাড়ানোর ভঙ্গিতেও যেন প্রজ্ঞার ছাপ বিদ্যমান....
সে মিনিটে কয়বার পলক ফেলে, তাকাইবার ভঙ্গি কখন কি রকম, কখন কিভাবে হাত নাড়িতেছে.....
উফ!
পনেরটা মিনিট.....
আহারে আহাম্মক!

জয়দেবপুর আসিয়া তাহারা নামিয়া গেল, নামিবারই ছিল....

কেমন এক প্রকার শূন্যতা অনুভব করিলাম হঠাৎ...
নামিয়া পেছনে ফিরিল সে, প্রথম চোখাচোখি....
কি গভীর সে চোখ!
ভাবিলাম আরেকবার.. আরেকটিবার ফিরুক সে....

ফিরিলোও....
এবার আমার চোখে হাসি
আর তার চোখে?
বিব্রত বিরক্তির ছাপ....

২৮শে জানুয়ারী, ২০১৭
শাইয়িন কবির

মন্তব্যসমূহ