বৃষ্টিবন্দনা - শাইয়িন কবির

উহারা কাহারা?
যাহারা বলিয়া থাকে বৃষ্টি নামিলে রোমান্টিসিজম নামে এক মহাজাগতিক অনুভূতির উদয় হয়, এক প্রকার বিশেষ প্রশান্তি কাজ করে!

ঘরের ভেতর বসিয়া কাঁচঘেরা জানালায় বৃষ্টি দেখা সুখকর, প্রেমিকাকে লইয়া বৃষ্টিতে ভিজিবার আনন্দও আছে, তেমন বৃষ্টিতে কবিমনে জোয়ার আসিয়া কলম কাগজ ভাসাইয়া লইয়া যায়(যদিও বর্তমানে ফেসবুকের ওয়াল ভাসে)।

তবে বৃষ্টিতে জামা ভিজে, জুতা ভিজে, ব্যাগ ভিজিয়া বই খাতা নষ্ট করে! আর ইহা নৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাহা মানুন আর নাই মানুন।
দুপুরে কামারপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় হইতে যখন বাহির হইলাম, তখন আকাশ ফকফকা পরিষ্কার!

বাসে করিয়া বিশ্বরোড পাড় হইতেই কুত্তার বাচ্চার মত বৃষ্টিতে ধরিল, রাস্তায় জমা পানি দেখিয়া বুঝিলাম এ বৃষ্টি ক্ষণিকের নহে, সেই কোন সক্কাল হইতে আরম্ভ হইয়াছে কে জানে!

মাটিকাটা আসিয়া বাস হইতে নামিয়া ছাতাটা মেলিতে মেলিতেই অর্ধেক ভিজিয়া গেলাম। ছাতা খুলিয়া ধরিতে শরীরের উপরের অংশ ভেজা হইতে নিষ্কৃতি পাইলো বটে, নিচের অংশ ভিজিতেই থাকিলো। পেছনে ফিরিয়া দেখিলাম ব্যাগ ও ভাল ভাবেই ভিজিতেছে।
কেমন লাগে তখন!
প্যান্টখানা শুকাইতে দিলেই ঠিক হইবে মানিলাম, কিন্তু মোটে একজোড়া জুতা আমার, ক্রমাগত কয়েকটা দিন বৃষ্টিতে ভিজিয়া ছাল বাকলা উঠিয়া যাওয়ার উপক্রম হইয়াছে। ব্যাগখানিও বৃষ্টিতে ভিজিয়া ছিড়িয়া গিয়াছে অনেকখানি।
হাসিলাম একবার!

আহারে আহাম্মক!
রবীন্দ্রনাথ জন্মসূত্রে জমিদারী পাইয়াছিলেন, তাহার কি আর জুতার ভয় ছিলো!
ভাবিতে ভাবিতে পরিচিতদের মধ্য হইতে বৃষ্টি নামক যে কয়জন ব্যক্তি পৃথিবীতে অথবা স্বর্গে আছেন তাহাদের নামে সহস্র গালিপাঠ করিয়া উৎসর্গ করিলাম!

কিন্তু পথ দিয়া আসিতে আসিতে যখন দেখিলাম ক্যান্টনমেন্ট গার্লস কলেজের সুন্দরী বালিকারা বৃষ্টিতে কাকভেজা হইয়া একে অন্যের সাথে জলকেলি করিতেছে তখন বুঝিলাম আমি এখনও মানুষই রহিয়া গিয়াছি।
আমার অসম্ভব রকমের পুলক জাগিল। ছুটিয়া বাসায় আসিয়া ব্যাগখানি রাখিয়া ছাদে গেলাম।

আহ বৃষ্টি!
রেলিঙের পাশে দাড়াইয়া কর্দমাক্ত আকাশ দেখিতেছি, বৃষ্টিস্নাত খাল হওয়া রাস্তা দেখিতেছি, নাক থেকে গড়িয়ে পড়া জলের বিন্দুর ছয়তলার ছাদ হইতে মাটিতে পতন দেখিতেছি!
এমন সকল বিচিত্র ব্যাপারস্যাপার দেখিতে দেখিতেই হঠাৎ চোখ পড়িল পাঁচ তলার ব্যালকনির দিকে, কোন এক তরুণী বারান্দার গ্রিল ভেদ করিয়া হাত বাড়াইয়া বৃষ্টিসুখ অনুভব করিছতেেন, ফর্সা হাতে মেহেন্দি করা, বারবার হাত নাড়াইয়া এপাশ ওপাশ করাইয়া এমন এক ছন্দময় ভঙ্গি সে করিতেছিল যেন হঠাৎ দেখিলে মনে হইবে দুর হইতে হাতছানি দিয়া কাউকে কিসের এক দুরন্ত আহ্বানে জড়সড় করা হইতেছে! 

কে জানে!
তবে ইহাতে পুনরায় আমার পুলক জাগাইলো,ইহাই রোমান্টিসিজম কিনা তাহা আমার জানা ছিল না, জানার কথাও না। তবে বড় কৌতুহল হইলো, আরেকটু বেশি দেখিবার জন্য আমি রেলিঙে ঘেষিয়া ঝুঁকিয়া দাঁড়াইলাম।
পচাত করিয়া একটা শব্দ হইলো হঠাৎ, দেখিলাম...

এমনিতেই অনেকক্ষণ ভিজিয়া প্যান্টের সুতা নরম হইয়া গিয়াছিল, হঠাৎ ঘষা খাইয়া হাটুর উপর হইতে খানিকটা যায়গা ছিড়িয়া গিয়াছে!
আমি ক্ষণকাল একেবারেই হতভম্ব হইয়া রহিলাম, একবার ছেড়া প্যান্টখানার দিকে তাকাইলাম, একবার আসমানের দিকে।

নিজের অজান্তেই ভেতরকার উত্তাপ মুখ দিয়া বাহির হইয়া আসিলো, বৃষ্টির মায়রে বাপ!





মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন