প্রিয় রাজলক্ষ্মী - জয়ন্ত

প্রিয় রাজলক্ষ্মী,

ভেবো না তুমি বেশ্যা বলে ঘর বাঁধতে পারলাম না তোমার সাথে।
সতীপর্দা ছিঁড়লেই কেউ অসতী হয় -
সে কথায় যে আমি বিশ্বাসী নই তা তুমি ঢের ভাল করে জানো।

সেদিন জানালার পর্দাটা সরিয়ে দেখলাম -
তুমি সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালছো তুলসি তলায়।
কোমরে জড়ানো আছে রুপোর বিছে,
পায়ে পুরু নূপুর,
পরনে টকটকে লাল তাঁতের শাড়ি।

এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলাম আমি,
থমকে গেলো আমার সমস্ত পৃথিবীটা।
এই রাজলক্ষ্মীকে শেষ দেখেছিলাম বুড়ো শ্মশানে,
শরীর জুড়ে ছিল সাদা থান,
সামনে জ্বলছিল বৃদ্ধ স্বামীর চিতা।

তুমি একদিন বলেছিলে না -
তুমি নাকি মারা গেছো!
আজ হঠাৎ করে মনে হচ্ছে ,
আমার রাজলক্ষ্মী মারা গেছে অনেকটা বছর আগে।

আচ্ছা,
তোমার কি কমললতার কথা মনে আছে?
যাকে কিনা তুমি হিংসে করতে!
যার ভালবাসাকে তুমি হিংসে করতে!

মনে করে দেখো,
তুমি একদিন জানতে চেয়েছিলে- ভালবাসা কি?
আমি মৃদু হেসেছিলাম।
আসলে এই ছোট্ট জীবনে বেঁচে থাকাটাই নেহাত কাকতালীয়।
ভালবাসাটাও কাকতালীয় বৈকি!
কমললতা একদিন অবশ্য বলেছিল-
যেখানে মুক্তি মূর্তিমান, সেখানে ভালবাসা নিষ্ঠুর।

তুমি হয়তবা বলবে- মুক্তি শব্দটাই তো নিষ্ঠুরতার প্রতীক।
কিন্তু ভালো করে একবার ভেবে দেখো-
এই মুক্তির নিষ্ঠুরতাই বুঝিয়ে দেয় ,
কাকে বলে ভালবাসা!
আর কাকে বলে অন্তরলিনতা!

যেখানে ব্যাকুলতা বৃষ্টির গান গায়,
সেখানে কবিতার পঙক্তি গিলে ফেলে স্মৃতিদের।
তাইতো পথে নামলাম স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায়,
মুক্তির বিক্ষুব্ধ লোভে।
তাইতো প্রণয়টাকে সাহস করে পাঠিয়েই দিলাম বৃদ্ধাশ্রমে।
রাজলক্ষ্মী, ভয় পেয়ো না যেন আবার,
আত্মহত্যা করবার সাহস যে হয়ে ওঠেনি এখনো।
আশা করি এই অন্তঃসত্ত্বা প্রেমটাকে নিয়ে ভালোই থাকব.....................
                              
                                                                                                           ইতি,
                                                                                                           তোমার শ্রীকান্ত




মন্তব্যসমূহ