দেহদূর্গের যুদ্ধ - শাকিবুল কবির

রাত গভীর!
প্রতিদিনকার মত সীমানা পাহাড়ায় ব্যস্ত টি বাহিনী। টি বাহিনীর আঞ্চলিক সেনাপতি কর্নেল T061 খানিকটা ঝিমিয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎই হন্তদন্ত হয়ে তার কেবিনে প্রবেশ করল এক তরুন লেফটেন্যান্ট। চটক ভেঙ্গে কর্নেল একটু বিরক্ত না হয়ে পারেন না, গম্ভীরমুখে প্রশ্ন করলেন, কি সমাচার?
-স্যার! উত্তর সীমান্তে কিছু বিচ্ছিন্ন সৈন্যদল আমাদের রাডারে ধরা পড়েছে, এখনো নিষ্ক্রিয় বলেই মনে হচ্ছে, তবে তাদের অরিজিনটা ধরতে পারছি না!
"সতর্ক পাহাড়া বসাও আর ওদের উপর নজর রাখো" বিরস মুখে বলেই টেবিলে মাথা এলিয়ে দিলেন!
স্যালুট করে লেফটেন্যান্ট  T1501 বেড়িয়ে যাবেন এমন সময় সাইরেনের তীক্ষ্ণ সুরে চারদিক ছাপিয়ে উঠলো, সঙ্গে তীব্র গোলাগুলির আওয়াজ।
তড়াক করে লাফিয়ে উঠলেন কর্নেল, ত্রস্ততার সাথে কমব্যাট স্যুট গায়ে দিতে দিতে বললেন, হেডকোয়ার্টার প্লীহায় একটা খবর দাও, প্রত্যেকটা জোন প্রস্তুত থাকতে বলো, পার্শ্ববর্তী বি বাহিনীর জোনটা থেকে সাহায্য চেয়ে পাঠাও, আমি বেরুচ্ছি।
বলেই এন্টিজেন বন্দুকটা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন কর্নেল।

ইতিমধ্যে যুদ্ধ ভালোমতোই লেগে গেছে, ছড়ানো ছিটানো সৈন্যদল গুলো সব একত্রিত হয়েছে, মারাত্মক সব রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে তারা সুসজ্জিত। ধোপে টিকতেই পারছে না টি বাহিনী, একের পর এক প্লাটুন ডাউন হচ্ছে, এর মধ্যেই বেশ কয়েকজন চৌকস অফিসার নিহত।
কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে কর্নেলের। অবস্থা ভালো নয়! নতুন কোন ভাবে যদি প্রতিরক্ষা বুহ্য সাজিয়ে আক্রমনটা করা যায়, ভাবছিলেন কর্নেল T061।
এই অবকাশেই একটা শেল তার কানের পাশ দিয়ে বেড়িয়ে গেল।

"ইশ! আরেকটু হলেই যেতাম!" কথাটা বলতে না বলতেই আরেকটা গোলা এসে পড়লো একেবারে তার বুকের ওপর, আর উঠতেও পারলেন না কর্নেল। লেফটেন্যান্ট T1501 ছুটে এলেন বটে সেনাপতিকে সাহায্য করার জন্য। তবে ততক্ষণে তিনি আর নেই।

পার্শ্ববর্তী দূর্গ থেকে খবর পেয়ে বি বাহিনীর চৌকস সৈন্যদল এসে পৌঁছেছে যুদ্ধক্ষেত্রে... তবে তারাও খুব একটা সুবিধা করতে পারছে বলে মনে হয় না।
অস্থিমজ্জা আর থাইমাস থেকে আরো টি এবং বি সৈন্যের দুটো বড় বিগ্রেড পাঠানো হচ্ছে বলে খবর পাঠিয়েছে,
অবস্থা বেগতিক বলে প্লীহা থেকে প্যারাকমান্ডো দল কিলার্সেল এবং ম্যাক্রোফেজ নামে স্পেশাল ফোর্স পাঠানো হচ্ছে,
কে জানে কতক্ষণে তারা আসবে আর কতক্ষনে এই ধ্বংসলীলা থামবে?

এর মধ্যেই এই জোনের টি বাহিনীর সকল সিনিয়র অফিসার মৃত্যুবরণ করেছেন,সৈন্যদেরও অধিকাংশ। চীফ কমান্ডার এখন T1501।
অল্প বয়স তার, এখন কি করনীয় তাই ঠিক করে উঠতে পারছিল না সে।

হঠাৎই চমৎকার একটা বুদ্ধি খেলে গেল লেফটেন্যান্ট T1501 এর মাথায় । ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টি সৈন্যগুলোকে সে আবার একত্র করে সে, এবার কিছু একটা হবেই।

সরবে সালাম ঠুকে নতুন বিগ্রেডও রিপোর্ট করে দাঁড়ালো তার সামনে, আর বোধ করি ভয় নেই।

ম্যাক্রোফেজ আর কিলারসেল এলেই সমন্বিত বাহিনীর বৈঠক বসে নতুন যুদ্ধ পরিকল্পনার জন্য। বৈঠকে T1501 তার প্লান সবার সামনে উপস্থাপন করে, একটু ঝুঁকিপূর্ণ বটে, তবে বেশ ফলপ্রসূ বলেই মনে হয় সবার কাছে।
লেফটেন্যান্ট T1501 তার বাহিনী নিয়ে খানিকটা দুর ঘুরে গিয়ে পেছন দিক থেকে আক্রমন করবেন, দুদিকের আক্রমনের আকষ্মিকতায় যখন শত্রুসেনারা যখন বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে তখনই উপর থেকে ম্যাক্রোফেজ এবং কিলারসেল ঝাপিয়ে পড়বে তাদের উপর, অত্যাধুনিক জীবানধ্বংসী এনজাইম দিয়ে ধ্বংস করে ফেলবে শত্রুদের.....

এরপরের গল্পটা অল্পই, পরিকল্পনামাফিক সব হয়,যার ফলে আর বলার প্রয়োজন কোথায় যে শত্রু সৈন্যদল সমূলেই নিপাত হয়েছিল। যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য লেফটেন্যান্ট T1501 পুরষ্কৃত হন। তিনি এখন একজন মেজর পদে থাইমাসে রিক্রুটিং সৈন্যদের প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
***

"এই তন্বী! এই! ওঠ এখনই। স্কুল আছে না?"
মায়ের প্রাত্যহিক চেচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গে তন্বীর, আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠেই আবার শুয়ে পড়ে সে, চোখ চুলকায়, নিজের চুলেই বিলি কাটে,নাক কুচকায়,ভেঙচি কাটে, এ তার প্রত্যেক সকালবেলার দুষ্টুমি, না করলে সকাল কিভাবে শুরু হয়?
কিন্তু আজ নাক কুচকানোর সময় কেমন একটা হালকা ব্যথা অনুভব হলো।
উমমম?
হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখে সামান্য ফুলে আছে।
ছুটে রান্নাঘরে গিয়ে ছোট্ট দুই হাতে মাকে জড়িয়ে ধরে সে, "মা! দেখো না নাকে কি?"
মা বিরক্ত হয়ে বলে,"যা তো! বিরক্ত করিস না, ব্রাশ কর গিয়ে।"
"দেখো না মা?" একটু জোরে চাপ দিয়ে বলে আবার।
পাতিলটা চুলা থেকে নামিয়ে তন্বীর দিকে ফেরে মা।
"আহ! কিছু হয়নি একটু লাল হয়েছে, যা এবার।"
"সত্যিই বলো না?" কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে তন্বী।
এবার একটা ধমক খেল, "যাবি? নাকি দেবো একটা? স্কুলের সময় হয়ে যাচ্ছে। "

জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তন্বী!
মা যদি জানতো কত কি না ঘটেছে গতকাল এখানে......

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন