কলামতি, তারপর?
তারপর কি হয়?
সকালে ঘুম থেকে উঠে বালিকা তার ফোনে একগাদা মিসডকল দেখে চমকে ওঠে। "ওমা! বালক তাকে এতবার ফোন দিয়েছে কেন?" ভাবতে না ভাবতেই বালকের নাম্বার আবার ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। কানে ভেসে আসে সিম্ফনি এক্সপ্লোরার ৬৮কিউ মডেলের সেই বোরিং রিংটোন।
বালিকা যখন কলটা রিসিভ করে, তখন বালক ঢাকার বৃষ্টির মধ্যে ময়লা-কাদা পেরিয়ে ভিজে চুপচাপে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়িয়েছে। আজ সে বালিকার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। বালিকা এক মাসের ছুটিতে নানুবাড়ি গেছে গ্রামে। যদিও বালকের এইচএসসি পরীক্ষা চলছে, তবুও সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে—"না! এই এক মাস বালিকাকে না দেখে থাকা যাচ্ছে না।"
কোথায় ছিলো বালিকা, আর কোথায় ছিলো বালক! বালিকার নানুবাড়ির গ্রামে বালক কস্মিনকালেও যায়নি, এমনকি জায়গাটার নামও শোনেনি কখনো। ফোনের ওপাশ থেকে বালিকার কণ্ঠ আসে—
— "খবরদার! তুমি আসবা না। এক্ষুণি বাসায় যাও। তুমি তো এখানকার কিছুই চেনো না! আবার একা একা আসতেছো! যদি হারিয়ে যাও? এক্ষুণি বাসায় যাও তুমি, এক্ষুণি!"
~~ "আচ্ছা কলামতি, তুমি কি আমায় ছোট্ট বাবু ভাবো? আমি হারাবো না... তুমি শুধু বলো, কোন বাসে উঠবো? সামনে তো দুই-তিনটা বাস, কোনটাতে উঠব? আর নামব কোথায়?"
— "আচ্ছা, তুমি কি কোনদিনও আমার কথা শুনবা না? ধ্যাৎ!"
~~ "কি হলো? তাড়াতাড়ি বলো, বাস কোনটা? বাস ছেড়ে দিচ্ছে তো!"
অবশেষে, বালক একটায় উঠে পড়ে। বালিকা সময় গুনতে থাকে। তার মনেই প্রশ্ন— বালকটার গোল গাল দুটো যদি একটু টিপে দেয়, ছেলেটা কি লজ্জা পাবে? কিংবা হাতের তালুর এক পাশে থাকা তিলটা যদি ছুঁয়ে যায়, তাহলে বালক কি কাঁচুমাচু করে বসবে?
ভালো লাগে, ভালোবাসা ভালো লাগে বালিকার! ছাইপাস ভেবে দিন কাটে তার। দুপুরের হাত ধরে বিকেল আসে। বালক ঠিক ঠিক খুঁজে পায় বালিকার ঠিকানা।
বালিকার চোখে সীমাহীন আনন্দ, হয়তো সেই আনন্দে চোখের কোণ ঘোলাটে হয়ে ওঠে নোনতা পানিতে। বালক ক্লান্ত চোখে বালিকাকে দেখে, কিন্তু ঘুরপথে তিন ঘণ্টার যাত্রা ছয় ঘণ্টায় শেষ হওয়ায় সে দেখতে পায় না বালিকার চোখের কোণের সেই নোনতা বিন্দু।
তাদের অনুভূতি যেন তৃতীয় কোনো ব্যক্তি জানতে না পারে— দীর্ঘদিন পর তাদের এই মিলন, যদিও দীর্ঘদিন ছিল না। তবুও অপেক্ষা, সময়টাকে দীর্ঘ করে তোলে।
মিনিট ষাটেকের মাঝে তারা একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে, চোখে চোখ রেখে চুপি চুপি হয়তো প্রতিজ্ঞা করে— কখনো না ছেড়ে যাওয়ার...
এরপর? এরপর কি হয়?
দিন যায়, মাস যায়। অপেক্ষাগুলো জায়গা আকড়ে ধরে দূরে থাকার স্বস্তিকে। তারপর?
বালিকা একা।
বালকও একা।
আবার কখনো হুট করে তাদের দেখা হবে কিনা, জানা নেই।
অপেক্ষায় রইলো সব—
অপেক্ষায় রইলো প্রতীক্ষার দুপুর,
অপেক্ষায় রইলো বিকেল আর সন্ধ্যে মিশে যাওয়া সময়টা।
তারপর? তারপর কি হবে?
ভালোবাসা কি ভালো লাগবে?
জানা নেই... সত্যিই জানা নেই।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন