ছেড়া জুতোর উপহাস - শাইয়িন কবির
বিশ টাকার একটা নোট,
একটা দশ টাকা,
ছোট পকেটে পাঁচ টাকার ছেঁড়াখোঁড়া একটা নোট আর দুইটা এক টাকার রুপোলী কয়েন!
মোটমাট সাঁইত্রিশ!
মানিব্যাগ ঝেঁড়েঝুঁড়ে এইটুকুনই সম্বল মুগ্ধের....
সামনের বেশ কয়েকটা দিন এ নিয়েই চলতে হবে তার...
রাস্তায় বেড়িয়ে বিশুদ্ধ ধোঁয়ার সন্ধান করে সে। পকেটের দিকে তাকিয়ে একবার দমেও যায়।
কিন্তু শেষমেশ আর পেরে ওঠে না।
কয়েকবার ভেবেছে সিগ্রেটের বদলে বিড়ি কিনবে, দেশজ পন্য, দামেও সস্তা, একটা বেনসনের দামে চব্বিশটা পাওয়া যায়, মন্দ কই!
আর সবচেয়ে বড় কথা সেদিন কথায় কথায় এক বড়ভাই বলেছিলেন বিড়ির তামাকে নাকি ক্ষতি কম!
কে জানে!
তবে শেষে গিয়ে নিজের কাছেই কেমন কেমন ঠেকেছে।
সুতরাং আর কেনা হয়নি...
রেল ইঞ্জিনের মত ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে অন্ধকার রাস্তায় হেটে চলছিল মুগ্ধ,
এক গন্তব্যহীন পথচলা!
পকেটে আরেকখানা শলাকা আছে, ওটা পরের জন্য।
বেশ দুরে দুরে কয়েকটা ল্যাম্পপোস্ট...
আবছায়া নেশাতুর একপ্রকার অন্ধকার!
অন্ধকারে হাটতে ভালোই লাগে মুগ্ধের। নিজেকে খুঁজে পাওয়ার এক অসাধারন অনুভূতি পাওয়া যায় কিনা!
নিশাচর পাখিদের জাগার সময় হয়ত এখনো হয়নি, তাই একেবারে শুনশান চারিদিক ...
সামনে একটা বয়স্থ বটগাছে বহুকাল আগে একটি অল্পবয়স্কা মেয়ে আত্মহত্যা করেছিল বলে জানা যায়, সেই থেকে অন্ধকার নামার পর এ রাস্তায় চলাফেরা হয়না বললেই চলে....
লোকে বলে ভুতের ভয়!
কে জানে....
ভাবতেই চমকে উঠলো মুগ্ধ!
ভুতের ভয় নেই তার, তবুও পা গুলো কেমন জড়িয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে না...?
চমক ভাঙতেই পায়ের দিকে তাকালো মুগ্ধ!
এবার আশপাশ কাঁপিয়ে একটা অট্টহাসি না দিয়ে সে পারলো না,
তার জুতো!
ছিঁড়ে গেছে.....
কপাল!
এই শহুরে জীবনে সবচেয়ে একটি বড় দুর্ভোগ সম্ভবত বেজায়গায় জুতো ছিড়ে যাওয়া....
কে জানে....
জুতোটা খুলে হাতে নিল মুগ্ধ....
সামান্য পায়ের নিচে জুতা না থাকার অসহায়ত্ব টের পেল সে মুহুর্তেই,
পৃথিবী যেন তার কঠিনতম রুপ ধারন করলো,
পাড়ার কুকুরটাও তাকে চিনতে পারলো না, তাঁড়া করে এলো মুখ খিঁচিয়ে, বুড়ো ফকিরটা তাকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো, পেছনে কার ছায়া সে দেখছে?
সদ্যযৌবনা প্রতিবেশি কিশোরী খিলখিল করে বিদ্রুপের হাসি হেসে বললো,
হিমু হইছে গো!
হিমু!
জুতো ছিড়েছিল বলেই হয়ত হিমু ভাই হিমু হয়েছিল।
কে জানে....
[...]
পুনশ্চঃ আচ্ছা! পায়ের নিচে মাটি না থাকার অনুভূতিটা কেমন?
- #মুগ্ধ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন