বসন্ত বিলাপ


সে আজ শাড়ি পড়বে...
বাসন্তী রংএর শাড়ি.....
একহাত ভরা ম্যাচ করা চুড়ি হয়ত হাতে থাকবে তার..



সোনালী বিকেল জানলায় উঁকি মেরে যায়,
ঋতুচক্রের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানবমনের পরিবর্তনের কি যে সম্পর্ক তা হয়ত বিজ্ঞানের ভাষা দিয়ে বোঝানো যাবে না....
বোঝানোর সামর্থ্যও আমার নেই...

বছর দুয়েক আগে (১৪২০) হঠাৎ একদিন জিয়া স্যার বাংলা ক্লাস কম্বাইন্ড করলেন....
ক্লাসে এসে বললেন, আজ তোমাদের ক্লাসটা একসাথে নেবো...ক্লাস বলাটা ভুল... আজ বসন্তবরন হবে..পহেলা ফালগুন আজ,জানো তো..?আর বসন্ত তো প্রেমেরই ঋতু....প্রেমময় আবহটা আনলে আজ বোধ করি দোষের কিছু হবে না....
 যাক,কবি!
তুমিই দাঁড়াও .... আচ্ছা, বসন্ত তো এসে গেল,ঋতুচক্রের পরিবর্তনের সাথে সাথে আর কি কি পরিবর্তন তোমার চোখে পড়েছে?
খানিকক্ষণ মাথা চুলকে মুচকি হেসে বললাম,স্যার খুব একটা পারিবর্তন চোখে তো পড়ছে না,কৃষ্ণচূড়া ডালে ফুল আসে নি,ডালে নতুন কিশলয় চোখে পড়ে নি,নচ্ছাড় কোকিলও বোধ করি ডেকে উঠেনি,কেবল শীত আকাশের তীব্র সাদাটা ফিকে হয়ে গেছে বলেই মনে হল...

"বোকা কবি!" একগাল হেসে বললেন,হৃদয়ে রংএর আনাগোনা টের পাচ্ছ না?
ছোট্ট করে একটু হাসি দিয়ে চুপ হয়ে গেলাম....
হৃদয়ের বসন্ত যে অন্য স্তরের বিষয়....

এটা বুঝেছিলাম অবশ্য গত বসন্তে... হঠাৎই শীতের কুয়াশা বদলে গিয়ে বাসন্তী রং ধারন করে,হৃদয়ের প্রশস্ত সাম্রাজ্য জুড়ে রংএর ছড়াছড়ি শুরু হয়... ফুল ফোটে,,পাখি গায়...

"জানিস ,অন্য কোন দিবস টিবসের গুরুত্ব আমার কাছে থাকুক না থাকুক,এই বসন্তবরন আমার নিজস্ব উৎসব... এর গুরুত্বটা সবসময়ই সবার উপরে...."
অতঃপর তার চোখে শত শতাব্দীর আকাশ দেখেছিলেম বাসন্তী রঙে রঙ্গীন....
তার খোলা চোখে... প্রিয় চশমাটা খুলে রেখে লম্বা চুলে খোঁপা করেছিল সে....
তাতে গোঁজা গাঁদাফুলের ঘ্রানে মাতাল হয়েছিলাম...
তারপর.....
সবই ধোঁয়া ধোঁয়া.... অস্পষ্ট ফিকে গল্পটার অর্থটা আজও জানা হয়ে উঠে নি....

একটু ঝিমিয়ে পড়েছিলাম,ছোটবোন এসে ডাকলে,ভাইয়া... ও ভাইয়া...
আধ ঘুমচোখেই বললাম,হু বল
-অবেলায় ঘুমাচ্ছো যে... মনে আছে,আজ কি?
-হ্যা আছে....
- তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছো? আজ নাকি তার নিজস্ব উৎসব....?
একটা হাসি দিলাম ছোট্ট করে....
-সে অনেক সুন্দর করে শাড়ি পড়তে জানে,ওকে বলিও আজকের ছবিগুলো যেন দেয়.....
আবার একটু হেসে বললাম, আচ্ছা!
জানি ছবিগুলো আর দিতে পারবে না সে...তবু এইটুকু বলাতে তার স্বত্তাটা বেঁচে যদি থাকে,দোষ কই?
থাকুক নাহয়.....

হয়ত,
এ বসন্তেও সে শাড়ি পড়বে,
বাসন্তী রঙ্গের শাড়ি.....
এক হাত ভর্তি ম্যাচ করা কাঁচের চুড়ি...
প্রিয় চশমাটা খুলে চুলে খোঁপা করবে...
সেই খোঁপায় শোভা পাবে হলুদ গাঁদাফুল....
হয়ত প্রজাপতি রঙের দুঃখগুলো চোখের নিচ থেকে মুছে ফেলতে হালকা করে প্রসাধনও নেবে....
কপালের মধ্যিখানে বড় একটা টিপ...
হয়ত পায়ে চালানো সাইকেল রিকশায় চড়ে অচেনা কোন শহরের রাস্তায় বিকেল বিচরণ করবে....
কেবল তার পাশে একটা বোকা বোকা হাসিই অনুপস্থিত থাকবে.....
কে জানে....
হয়ত সেই স্তরে বোকা বোকা হাসিওয়ালা কেউ তার সঙ্গ দেবে...
বসন্তের উৎসবমুখর নতুন বাতাসটা যে দীর্ঘশ্বাসে ভারী হলো তা লক্ষ করবে না কেউই ...


আজ যে বসন্ত....

"আহা আজি এ বসন্তে গানটা শোনাবি একবার?"
আদুরে একটা কন্ঠস্বরের বড্ড অভাবে ভুগছি.....
গানের লিরিক ভুল করলে আলতো করে বকে দেয়া মানুষটাকেও এ বসন্তের সন্ধায় বড্ড বেশি মনে পড়ে....
বড্ড বেশিই.....

ভাল থাকুক বসন্তেরা..... <3

পুনশ্চ,
সেদিনও ছিল বিকেল এমন...
হলদে শাড়িতে মোড়া একজন স্থুল দেহের অধিকারিণী ঘোরতর কৃষ্ণ বর্ণ লুকাবার চেষ্টা করেছিলেন মুখে আটা মেখে,বাইকের ব্যাকসীটে তাকে বসে থাকতে দেখে রাহাদ ভাই সিটি দিয়েছিলেন,
কথা দিয়েছিলেন সুজি খাওয়াবেন....
রাহাদ ভাই কিন্তু কথা রাখেন নি.....
আসলে দিনশেষে কেউই কথা রাখে না...
পৃথিবীকে আলো দিয়ে ভরিয়ে রাখবে বলে কথা দেয়া সকালের সূর্যটাও বিষন্ন সন্ধায় এসে ডুবে যায়...
কেউই কথা রাখেনি...
আমি জানি রাখবেও না.....


পুনঃ পুনশ্চঃ
বসন্ত এসে গেছে.... দেয়ালে রঙের ছটা দেখছি... বাল্বের পেছনদিকটায় এক টিকটিকি দম্পতি রোমান্স করছে..... একটুকরা বসন্তের প্রতিফলনই....

পুনঃ পুনঃ পুনশ্চঃ
সবাইকে বসন্তের শুভেচ্ছা!
বসন্তের রঙে রঙ্গীন হৌক আপনার জীবন.....


শাইয়িন কবির
পহেলা ফাল্গুন,১৪২২

মন্তব্যসমূহ